THE AMBEDKOR IDEAL NEVER DIE
১৯৪৭ সালের ১৪ই মে বুধবার তৎকালীন বাংলার যখন সমস্ত মনুবাদী সংগঠনগুলি বাংলাকে ভাগ করতে বদ্ধপরিকর, সেই সময় দাঁড়িয়ে ১৩ বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড ঠিকানায় বাংলার বঙ্গীয় প্রাদেশিক তফসিলী জাতি ফেডারেশন সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাভাগের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক তফসিলী জাতি ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল।
উক্ত প্রস্তাবে বলা হয় - "বঙ্গীয় তফসিলী ফেডারেশনের কার্যনির্বাহক সমিতি গভীর মনোনিবেশ অসতর্কতার বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব বিবেচনা করেছেন এবং কার্যত বঙ্গভঙ্গ হলে তার ফলাফল সম্পর্কেও সুচিন্তিতভাবে বিবেচনা করে এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে বাংলাকে হিন্দু ও মুসলিম বঙ্গে বিভক্ত করলে সাম্প্রদায়িক সমস্যার কোনও সমাধান না হয়ে বরং উত্তরোত্তর সাম্প্রদায়িক সমস্যাকে আরও জটিলতর করে তুলবে এবং পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা সংখ্যায় আরও সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে জটিলতর অসহায় অবস্থার মধ্যে পরবে। কমিটি মনে করে যে, বঙ্গবিভাগ শুধু পূর্ববঙ্গের হিন্দুদেরই ক্ষতিকারক হবে তা নয়, বরং উহা সমগ্র পূর্ব ও পশ্চিম বাঙলার হিন্দু ও মুসলিমদের সমূহ ক্ষতি করবে। অধিকন্তু বঙ্গ বিভাগ সমগ্র বঙ্গে বিচ্ছিন্ন তফসিলী জাতির সংঘবদ্ধতা ও জাগ্রত জাতীয়তাবোধকে নির্মমভাবে ধ্বংস করবে।পূর্ববঙ্গের তফসিলীদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের অনুগ্রহ ও কৃপার উপর নির্ভর করতে হবে এবং পশ্চিমবঙ্গের তফসিলীদের চিরকালের জন্য বর্ণহিন্দুদের দাসত্ব স্বীকার করতে হবে।সুতরাং তফসিলী জাতি এইরূপ ক্ষতিজনক ও ভয়াবহ প্রস্তাবে সম্মত হতে পারে না। কাজেই তফসিলী ফেডারেশনের কার্যকরী সমিতি যে কোনও প্রকার বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছে এবং বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে লড়াই করবার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করছে । অধিকন্তু, কার্যকরী সমিতি এই প্রদেশের জনসাধারণকে বিশেষ করে তফসিলী জাতিকে এই আত্মঘাতী প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হবার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছেন।"
[তথ্যসূত্র : মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ, তৃতীয় খণ্ড, জগদীশ চন্দ্র মণ্ডল, পৃ. ১০২]
১৪ই মে তারিখের বঙ্গীয় প্রাদেশিক তফসিলী জাতি ফেডারেশনের এই মিটিংয়ে গৃহীত প্রস্তাবগুলিসহ সংবাদে প্রকাশিত হয়েছিল ১৬ই মে, ১৯৪৭ সালের Nationalist পত্রিকায়।
[তথ্যসূত্র: মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ, তৃতীয় খণ্ড, জগদীশ চন্দ্র মণ্ডল, পৃ. ১০২, ১০৩,১০৪]
আজ থেকে ৭৩ বছর আগে মহাপ্রাণ ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক তফসিলী জাতি ফেডারেশন যে সকল ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, তার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য আজ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এবং আগামীতেও আরো প্রমাণিত হবে। আজ পূর্ববঙ্গের (বর্তমানে বাংলাদেশ ) তফসিলীরা সংখ্যাগরিষ্ঠদের অনুগ্রহ ও কৃপার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর পশ্চিমবঙ্গের তফসিলীরা চিরকালের জন্য বর্ণহিন্দুদের দাসত্ব স্বীকার করেছে।
তবে মহাপ্রাণের ইতিহাস যদি আমরা বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারি, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারি কোনটা ইতিহাস আর কোনটা বিকৃত ইতিহাস -- তাহলেই বাংলা বর্ণহিন্দুদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে। আর এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে বাংলার সমস্ত আম্বেদকরবাদী সংগঠনগুলোকে।
__________________________________________________
তথ্যসূত্র :
মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ, তৃতীয় খণ্ড, জগদীশ চন্দ্র মণ্ডল
Comments
Post a Comment