MUGHAL EMPIRE LAST HISTORY OF INHERITANCE SULTAN BAHADUR SHAH JAFAR
বাহাদুর শাহ সিংহাসনে আরোহণের ২০ বছর পর সূত্রপাত হয় ঐতিহাসিক সিপাহি বিদ্রোহের।
পলাশীর যুদ্ধের পর ১০০ বছর কেটে গেছে তত দিনে। ছলেবলে কৌশলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সমগ্র ভারতবর্ষ দখল করে নিয়েছে। দেশবাসীর সাথে সৈন্য বিভাগের লোকদের ওপরও চলছে জুলুম, বঞ্চনা ও নির্যাতন। একের পর এক দেশীয় রাজ্য ইংরেজ অধিকারে নিয়ে যাওয়া, লাখেরাজ ও দেবোত্তর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, কারাগারে হিন্দু-মুসলমান সিপাহিদের জন্য একই খাবারের ব্যবস্থা, ঘিয়ের মধ্যে চর্বি ও আটার মধ্যে হাড়গুঁড়োর সংমিশ্রণ, গরু ও শূকরের চর্বি মিশ্রিত কার্তুজ বিতরণ ইত্যাদি ভারতবর্ষের জনমনে কিংবা সৈনিকদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ভারতীয় সিপাহিদের মধ্যে ধূমায়িত বিক্ষোভ ও অস্খিরতার প্রথম বহি:প্রকাশ ঘটে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের দমদম সেনাছাউনিতে। সিপাহিরা ইংরেজ অফিসারকে জানায়, এনফিল্ড রাইফেলের জন্য যে কার্তুজ তৈরি হয়, তাতে গরু ও শূকরের চর্বি মেশানো থাকে এবং এতে তাদের ধর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সিপাহিদের বুঝিয়ে শান্ত করে। কিন্তু খবরটি একে একে বিভিন্ন সেনাছাউনিতে পৌঁছে যায় এবং তা সিপাহিদের মধ্যে বিদ্রোহের রূপ ধারণ করে। প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে পশ্চিমবঙ্গের সহতস বহরমপুর সেনাছাউনিতে ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯ নম্বর পদাতিক বাহিনীর সিপাহিরা কার্তুজ নিতে অস্বীকার করে, রাতে অস্ত্রাগারের দরজা ভেঙে পুরনো মাসকেট বন্দুক ও কার্তুজ সংগ্রহ করে। তারা ভীষণ উত্তেজিত অবস্খায় ছিল। পরিস্খিতি সামাল দিতে সিপাহিদের নিরস্ত্র ও বরখাস্ত করা হয়। এই সংবাদও দ্রুত পৌঁছে যায় বিভিন্ন সেনানিবাসে। ২৯ মার্চ রোববার ব্যারাকপুরের দেশীয় সিপাহিরা বিদ্রোহ করে। মঙ্গল পান্ডে নামের সিপাহি গুলি চালিয়ে ইংরেজ সার্জেন্টকে হত্যা করে। বিচারে মঙ্গল পান্ডে তাকে সহায়তার অভিযোগে জমাদার ঈশ্বরী পান্ডেকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ৮ এপ্রিল সকাল ১০টায় তাদের ফাঁসি দেয়া হয়। এর পরিণতিতে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভারতের উত্তর থেকে মধ্যপ্রদেশ এবং জলপাইগুড়ি থেকে পূর্ববাংলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের চট্টগ্রাম পর্যন্ত। ৯ মে উত্তর প্রদেশের মিরাটের সিপাহিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন দিল্লির পথে অগ্রসর হন। ১১ মে সিপাহিরা দিল্লি অধিকার করে বহু ইংরেজকে হত্যা ও বিতাড়ন করেন। দেশপ্রেমিক সিপাহিরা এ দিন লালকেল্লায় প্রবেশ করে । তারা লাল কেল্লা দখল করে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে স্বাধীন ভারতের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে। আসলে বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ চিহ্ন। ইংরেজরা তাকে নামমাত্র টিকিয়ে রাখলেও তাঁর হাতে কোন ক্ষমতা ছিল না। বিপ্লবীরা গভীর রাতে লালকেল্লায় ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে ৮২ বছরের বৃদ্ধ সম্রাটকে তাদের নেতা হিসেবে ঘোষণা করে। বৃদ্ধ বয়স, দুর্বল শরীর তারপরও শেষ সুযোগ পেয়ে সিংহের মত গর্জে উঠলেন বাহাদুর শাহ জাফর।
তিনি ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দ্রুত যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেললেন। তিনি সন্ধান করলেন এক গতিশীল নেতৃত্বের। ইংরেজদের মোকাবেলায় সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করার জন্য ভারতীয় রাজাদের কনফেডারেশন এর প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। সিংহাসন ত্যাগ করে সেই কনফেডারেশন এর হাতে যৌথ নেতৃত্ব তুলে দিতে চান। সমগ্র দেশীয় রাজন্যবর্গকে চিঠি দিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান বাহাদুর শাহ জাফর। সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর ৮২ বছর বয়সেও বিপ্লবীদের আবেদন গ্রহণ করে নেতৃত্ব দিতে রাজি হওয়ায় সারা দেশজুড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। একজন দায়িত্বশীল নেতার মত তিনি তার বাড়ির আসবাবপত্র পর্যন্ত বিক্রয় করে সৈন্যদের ছয় মাসের বেতনের ব্যবস্থা করেন। তিনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিপ্লবে সহযোগিতা করার জন্য আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেন। সাধারণ মানুষ ও সৈন্যবাহিনী তার পাশে থাকলেও বণিক শ্রেণি তাঁর আহবানে সাড়া দেয়নি।
রামজীবন, শ্রী জ্যোতি প্রসাদ এর মত ব্যবসায়ীরা ইংরেজদের বিপুল পরিমাণে আর্থিক সাহায্য করে কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাশে আর্থিক সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে তেমন কাউকে পাওয়া গেল না। বাদশা টাকা ছাপার জন্য টাকশাল খুললেন। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইংরেজরা দিকে দিকে নিষ্ঠুরভাবে বিদ্রোহীদের হত্যা করতে থাকে। রসদ এর অভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ও দুর্বল হয়ে পড়ে। একে একে এই বিদ্রোহ দমন করতে করতে ব্রিটিশ বাহিনী দিল্লির দিকে অগ্রসর হয়। বাহাদুর শাহ উপায়ন্তর না দেখে লালকেল্লা ছেড়ে তার পূর্বপুরুষ হুমায়ুনের সমাধিতে আশ্রয় নেন। এখান থেকেই তাকে সপরিবারে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্গে বন্দী হলেন বৃদ্ধ রাজা ও তার সহধর্মিণী বেগম জিনাত মহল।
বাহাদুর শাহের দুই পুত্রসহ রাজপরিবারের ২৯ জন শিশু ও বালক-বালিকাকে ইংরেজ সেনাপতি মিস্টার হুডসন গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করে ২৯ জনের কাটা মাথা বাদশাহের সামনে উপঢৌকন দেয়া হয়। অসহায় সম্রাট শিশুর মতো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তাঁকে প্রকাশ্যে জনপদে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়।
বাহাদুর শাহ জাফর সিপাহিদের বিপ্লব তথা ভারতবর্ষের প্রথম সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ সংবাদে কানপুর, লক্ষেîৗ, বিহার, ঝাঁশি, বেরিলি থেকে শুরু করে পশ্চিম ও পূর্ববাংলার সর্বত্র সিপাহিরা গর্জে ওঠে ‘খালক-ই খুদা, মুলক ই বাদশাহ, হুকুম ই সিপাহি।’ অর্থাৎ আল্লাহর দুনিয়া, বাদশার রাজ্য, সিপাহির হুকুম। একের পর সেনাছাউনিতে বিদ্রোহ হতে থাকে। ইংরেজরা অতি নির্মমভাবে বিদ্রোহ দমন করে। হাজার হাজার স্বাধীনতাকামীর রক্তে রঞ্জিত হয় ভারতবর্ষের মাটি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষও বিক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু ভারতীয়দের এই সংগ্রাম সফল হতে পারেনি। ইংরেজরা দিল্লি দখল করে নেয় এবং সম্রাট ২১ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করেন। ইংরেজ সৈন্যরা মীর্জা মোগল, মীর্জা খিজির সুলতান, মীর্জা আবু বকরসহ ২৯ জন মুঘল শাহজাদাসহ বহু আমির ওমরাহ, সেনাপতি ও সৈন্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সম্রাটকে বিচারের নামে প্রহসনের আদালতে দাঁড় করানো হয়। হাজির করা হয় বানোয়াট সাক্ষী। বিচারকরা রায় দেন, দিল্লির সাবেক সম্রাট ১০ মে থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংগঠনের দায়ে অপরাধী। তার শাস্তি চরম অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু তার বার্ধক্যের কথা বিবেচনা করে প্রাণ দণ্ডাদেশ না নিয়ে নির্বাসনে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।
১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি বিচারের প্রহসনে বাদশাহ ও তার স্ত্রীকে যাবত জীবন নির্বাসনে পাঠানো হয়। জীবনের শেষ দিনগুলি চিকিৎসাহীন অবস্থায় কাটে তাঁর । ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর শুক্রবার এই মহান দেশপ্রেমিক |
দুনিয়ার মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি দেন। সংকীর্ণমনা ইতিহাস বাহাদুর শাহকে স্মরণ রাখতে চায় না। কিন্তু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দেশকে ইংরেজ মুক্ত করার শপথ নিয়েছিলেন।
বাহাদুর শাহের ত্যাগ-ও কুরবানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। সেখান থেকেই নেতাজি গর্জে উঠেছিলেনঃ 'দিল্লি চলো'। ১৯৮৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী রাষ্ট্রীয় সফরে শেষ মুঘল সম্রাটের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
REST IN PEACE OUR BANGAL MUGHAL EMPIRE
HIS SHRINE BE LOCATED AT MAYANMAR
Courtesy By
SYED SHAHRUK HASAN
Comments
Post a Comment